function লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
function লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ১৯ নভেম্বর, ২০২৫

মহামান্য সংঘরাজের পেটিকাবদ্ধ এবং ভদন্ত বুদ্ধরত্ন স্হবিরের মহাস্হবির বরণ সম্পন্ন

মহামান্য সংঘরাজের পেটিকাবদ্ধ এবং ভদন্ত বুদ্ধরত্ন স্হবিরের মহাস্হবির বরণ সম্পন্ন

 

বাংলাদেশী বৌদ্ধদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু, বৌদ্ধ বিশ্বের বর্ষীয়ান কিংবদন্তী সংঘ মনীষা, একুশে পদক প্রাপ্ত, অগ্গমহাপণ্ডিত, শাসন শোভন, মহামান্য সংঘরাজ ড. জ্ঞানশ্রী মহাস্থবির মহোদয়ের ১০১ তম জন্ম দিন, তাঁর পবিত্র মরদেহের পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠান এবং বিনাজুরী শ্মশান বিহারের উপাধ্যক্ষ ভদন্ত বুদ্ধ রত্ন স্হবিরের মহাস্হবির বরণ অনুষ্ঠান গতকাল পশ্চিম বিনাজুরী শ্মশান বিহার সংলগ্ন বিনাজুরী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে সারাদিন ব্যাপী যথাযোগ্য ধর্মীয় মর্যাদায় সুসম্পন্ন হয়।সারাদিন ব্যাপি এই মহা ধর্মসম্মেলনে শত শত বহু প্রজ্ঞা পন্ডিত প্রবর ভিক্ষুসংঘ ও ধর্মপ্রাণ উপাসক উপাসিকা, অতিথিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সারাদিন ব্যাপি অনুষ্ঠান মালায় সকালবেলা প্রয়াত ড. জ্ঞানশ্রী মহাথের স্মরনে সংঘদান,ধর্মালোচনা বিনাজুরী শ্মশান বিহারের উপাধ্যক্ষ ভদন্ত বুদ্ধরত্ন স্থবির এর মহাস্থবির বরণ সম্পন্ন হয় ।সকালবেলার আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপ-সংঘরাজ ও প্রিয়শিষ্য প্রিয়দর্শী মহাস্থবির। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্মসেন মহাস্থবির। মুখ্য আলোচক ছিলেন ড. ধর্মকীর্তি মহাস্থবির, ভদন্ত শাসনানন্দ মহাস্থবির।বিশেষ অতিথি ছিলেন রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিসান বিন মাজেদ, সহকারী কমিশনার ভূমি অংচিং মারমা।

দিনব্যাপী দুই পর্বের বিকেল বেলার অনুষ্ঠানে উপ-সংঘরাজ শাসনস্তম্ভ ভদন্ত ধর্মপ্রিয় মহাস্থবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার মহাসচিব ড. সংঘপ্রিয় মহাস্থবির । প্রধান সদ্ধর্মদেশক ছিলেন ঢাকা মেরুল বাড্ডা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ ভদন্ত ধর্মমিত্র মহাস্থবির।উপ-সংঘরাজ ভদন্ত ধর্মদর্শী মহাস্থবির, বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি ভদন্ত প্রিয়ানন্দ মহাস্থবির, জিনালংকার মহাস্থবির,শীলভদ্র মহাস্থবির, বিনয়পাল মহাস্থবির, জিনানন্দ মহাস্থবির, বোধিপাল মহাস্থবির,

প্রজ্ঞানন্দ মহাস্থবির,বিদর্শচার্য প্রজ্ঞাইন্দ্রিয় স্থবির, প্রিয়ানন্দ মহাস্থবির। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন রাউজানের সাবেক এমপি ও বিএনপির নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।আরো উপস্থিত ছিলো

সাথী উদয় কুসুম বড়য়া,বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাস্টি ভবেশ চাকমা, ড. সুকোমল বড়ুয়া,অধ্যাপক ববি বড়ুয়া, সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল হুদা, ফিরোজ আহমদ, সাবের সুলতান কাজল, ছোট আজম, প্রমুখ।

পেটিকাবদ্ধ অনুষ্ঠান এবং ভদন্ত বুদ্ধ রত্ন স্হবির'র মহাস্হবির বরণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সদ্ধর্মজ্যোতি তিলোকাবংশ মহাস্থবির, প্রান্ত বড়ুয়া,ভদন্ত জিনবংশ মহাস্থবির ও ব্যাংকার সৈকত বড়ুযা।

সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫

আজ শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা

আজ শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা



আজ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব শুভ ‘প্রবারণা পূর্ণিমা’। এটি ‘আশ্বিনী পূর্ণিমা’ নামেও পরিচিত। আত্মশুদ্ধি অর্জনের মধ্য দিয়ে অশুভকে বর্জন করে সত্য ও সুন্দরকে বরণের আয়োজন এই প্রবারণা।

‘প্রবারণা’ শব্দের অর্থ:‘প্র’ মানে ‘উত্তমভাবে’ এবং ‘বরণা’ মানে ‘বরণ করা’ বা ‘স্বীকার করা’। অর্থাৎ ‘প্রবারণা’ মানে হলো নিজের ভুল বা ত্রুটি স্বীকার করে তা সংশোধনের জন্য প্রতিজ্ঞা গ্রহণ।

ধর্মীয় তাৎপর্য:এই দিনে ভিক্ষুরা একে অপরের কাছে নিজেদের ত্রুটি বা ভুলের কথা স্বীকার করেন এবং পরস্পরের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এটি আত্মশুদ্ধি, বিনয় ও সাম্যবোধের প্রতীক।প্রবারণা পূর্ণিমা মানুষকে আত্মসংযম, সহনশীলতা, সত্যবাদিতা ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ শেখায়। এটি আত্মসমালোচনা ও পরিশুদ্ধ জীবনের আহ্বান জানায়।

প্রবারণার পূর্ণিমার দিন আকাশ প্রদীপ প্রজ্বালন ( ফানুস বাতি ওড়ানো) হয়ে থাকে। কথিত আছে, সিদ্ধার্থ গৌতম গৃহত্যাগ করে অনোমা নদীর পরপারে উপনীত হয়ে সারথী ছন্নকে অশ্ব কন্থক ও শরীরের আভরণাদি প্রদান করে বিদায় দেন। অতঃপর তিনি ভাবলেন, ‘আমার মস্তকে সুবিন্যস্ত কেশকলাপ প্রব্রজিতের পক্ষে শোভনীয় নহে।’ তিনি দক্ষিণ হস্তে অসি এবং বাম হস্তে রাজমুকুটসহ কেশকলাপ ধারণ করে কেটে ঊর্ধ্বদিকে নিক্ষেপ করে সত্যক্রিয়া করেছিলেন, ‘যদি সত্যিই আমি ইহজন্মে মহাজ্ঞান (বুদ্ধত্ব) লাভে সমর্থ হই তাহলে এই মুকুটসহ কেশরাশি ঊর্ধ্বাকাশে উত্থিত হবে।’ তাঁর কেশরাশি আকাশে উত্থিত হলো। তাবতিংশ স্বর্গের দেবগণ কেশরাশি নিয়ে গিয়ে চুলমনি চৈত্য প্রতিষ্ঠা করে পূজা করতে লাগলেন। বৌদ্ধরা বুদ্ধের সেই কেশরাশির প্রতি পূজা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য আশ্বিনী পূর্ণিমায় আকাশ প্রদীপ বা ফানুস বাতি আমরা উড়িয়ে থাকি।আকাশ প্রদীপ যেহেতু বুদ্ধের সেই কেশরাশির প্রতি পূজা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য উড়িয়ে থাকি তাই আমাদের উচিত ধর্মীয় নিয়ম নীতির মাধ্যমে আকাশ প্রদীপ উত্তোলন করা।



বৃহস্পতিবার, ৭ আগস্ট, ২০২৫

আজ শুভ শ্রাবণী পূর্ণিমা

আজ শুভ শ্রাবণী পূর্ণিমা

এই পূর্ণিমা দিনটি বৌদ্ধদের জন্য ঐতিহাসিক অভিস্মরণীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। তথাগত বুদ্ধের পরিনির্বাণের ৩ মাস পরে মগধরাজ অজাতশত্রুর পৃষ্ঠপোষকতায় অরহত মহাকশ্যপ স্থবিরের সভাপতিত্বে রাজগৃহের বেভার পর্বতের সপ্তপর্ণী গুহায় ৫০০ শত অরহত ভিক্ষুদের উপস্থিতিতে প্রথম বৌদ্ধ সঙ্গীতি বা ভিক্ষু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই শ্রাবণী পূর্ণিমা তিথিতে।

 তথাগতের পরিনির্বাণ সংবাদ শোনার পর যাঁরা অনেকেই বুদ্ধকে দেখেনি তাঁরা শোকাবেগ সংবরণ করতে না পেরে কেউ বুক চাপড়িয়ে, কেউ মাথায় হাত দিয়ে, কেউ কেউ ছিন্নবৎ ভূতলে পতিত হয়ে ইতস্ততঃ এই বলে ক্রন্দন করছিলেন যে, কেন অতিশীঘ্রই ভগবান নির্বাপিত হলেন; অতি শীঘ্রই চক্ষুষ্মান পৃথিবী হতে অর্ন্তহিত হলেন। বিশেষ করে যারা পৃথকজন ভিক্ষু ছিলেন অর্থাৎ মার্গফল প্রাপ্ত হননি তারা কান্না থামাতে পারছিলেন না। সেই ভিক্ষুদের মধ্যে বৃদ্ধকালে প্রব্রজিত সুভদ্র নামে এক ভিক্ষু ছিলেন। তিনি শোকাহত ভিক্ষুগণকে বললেন তোমরা শোক করিও না। বিলাপ করিও না। আমরা এখন সেই তথাগতের বিভিন্ন শাসন, আদেশ ও নির্দেশ হতে মুক্তি পেয়েছি। এখন আমরা যা ইচ্ছা তা করতে পারব। বৃদ্ধ ভিক্ষুর কথা শুনে মহাকশ্যপ স্থবির মহোদয় অত্যন্ত মানসিকভাবে ব্যথিত হলেন। তিনি চিন্তা করল ভগবান পরিনির্বাণ হয়েছেন মাত্র এক সপ্তাহ হয়েছে এখনও তাঁর সুবর্ণময় দেহ ধরণীপৃষ্ঠে বিদ্যমান। সেই মুহূর্ত এই বৃদ্ধ ভিক্ষুর উক্তি যা বুদ্ধের শাসনে অশনি সংকেত।

অতঃপর দাহক্রিয়া শেষ হলে অরহত মহাকশ্যপ সেখানে উপস্থিত ৭ লক্ষ ভিক্ষুর সামনে বৃদ্ধ ভিক্ষু সুভদ্রের অন্যায় উক্তির কথা প্রকাশ করলেন। উপস্থিত ভিক্ষুগণ সুভদ্র ভাষিত উক্তি শুনে ভীষণ মর্মাহত হলেন। অরহত মহাকশ্যপ ধর্ম বিনয় পরিশুদ্ধ করার প্রস্তাব করলে সকলে তা সমর্থন করলেন। উপস্থিত ভিক্ষুগণের অনুরোধে অরহত মহাকশ্যপ বুদ্ধ প্রশংসিত ত্রিপিটক বিশারদ ধর্ম বিনয়ে গভীর জ্ঞানী প্রতিসম্ভিদাপ্রাপ্ত এরূপ ৫০০ অরহত ভিক্ষু নির্বাচন করলেন। আনন্দ স্থবির তখনও অরহত হতে পারেননি বলে তাঁর নাম উল্লেখ করেননি। ভদন্ত আনন্দ স্থবিরের নাম তালিকাভূক্ত করার জন্য উপস্থিত ভিক্ষুসংঘ বিনীতভাবে অনুরোধ জানালে অরহত মহাকশ্যপ তাঁকেও তালিকাভূক্ত করলেন। কারণ তিনি ভগবানের প্রধান সেবক হিসাবে সবসময় কাছে কাছে থাকতেন বিধায় সম্মেলনে স্মৃতিমান আনন্দের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশী। এই সম্মেলন কখন কোথায় অনুষ্ঠিত হবে সেই বিষয়ে পরামর্শ করার জন্য তালিকাভূক্ত ভিক্ষুদের নিয়ে অরহত মহাকশ্যপ রাজগৃহ অভিমুখে যাত্রা করলেন। অন্যান্য ভিক্ষুসংঘকে তাদের নিজ নিজ বাসস্থানে বা আরামে চলে যাবার নির্দেশ দিলেন। 

তখন মগধের রাজা ধর্মপ্রাণ অজাতশত্র“ ভিক্ষুসংঘের আগমন সংবাদ পেয়ে খুবই খুশী হলেন এবং অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলেন। রাজগৃহে উপস্থিত হয়ে রাজার নিকট ধর্ম বিনয় সঙ্গায়ণ করার প্রস্তাব করলে রাজা তাৎক্ষণিকভাবে সম্মত হয়ে অরহত মহাকশ্যপকে বললেন, আপনারা বিশ্বস্থভাবে ধর্ম সঙ্গায়ণ করুন আমার রাজাজ্ঞা আপনাদের ধর্মাজ্ঞা সু-প্রতিষ্ঠায় প্রবর্তিত হউক। অতঃপর রাজা ভিক্ষুদের অনুমতিক্রমে সপ্তপর্ণী গুহাদ্বারে পঞ্চশত ধর্মমন্ডপ প্রস্তুত করলেন। দক্ষিণ দিকে উত্তরমুখী করে স্থবিরগণের আসন সু-সজ্জিত করলেন। মন্ডপের মধ্যভাগে পূর্বমুখী করে ভগবানের আসন তুল্য ধর্মাসন নির্মাণ করে দন্ডখচিত ব্যজনী স্থাপন পূর্বক দেবতুল্য চমৎকার এক মন্ডপ তৈরী করালেন।

শ্রাবণী পূর্ণিমার পূর্বদিন ভিক্ষুসংঘ ভদন্ত আনন্দ স্থবিরকে উৎসাহ দিতে লাগলেন। অরহত না হয়ে সম্মেলনে যোগদান করা আপনার উচিত হবে কি? আমাদের অনুরোধে হয়ত আপনাকে তালিকাভূক্ত করেছেন কিন্তু বীর্যবানের পক্ষে ইহা শোভনীয় নয়। ধর্ম ভান্ডারাধ্যক্ষ হিসাবে খ্যাত, তথাগতের সঙ্গে ছায়ার মত বিচরণকারী ধর্ম বিনয়ে পন্ডিত আনন্দ স্থবির লজ্জায় এক রাত্রির মধ্যেই অরহত্ত্ব ফল প্রাপ্ত হওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হলেন। আনন্দ ভাবলেন আমাকে অরহত হতে হবে এবং অরহত হয়েই সম্মেলনে যোগদান করতে হবে। সমস্ত রাত্রি তিনি তার মনের শক্তি দিয়ে কায়গত স্মৃতি ভাবনায় রত হলেন। সারারাত্রি অবিশ্রান্ত কঠোর সাধনা করে বিনিদ্র রজনী যাপন করলেন তথাপি তৃষ্ণামুক্ত হতে পারেননি। বার বার বুদ্ধের কথা স্মরণ করছেন, বুদ্ধ বলেছিলেন -অচিরেই তুমি তৃষ্ণামুক্ত হবে। বুদ্ধবাণী তো মিথ্যা হতে পারে না। হতাশায় ও বেদনায় ক্লান্ত হয়ে শয়ন উদ্দেশ্যে ভূমিতল হতে পদতল উঠাচ্ছেন। হেলে পড়ছেন বালিশে মাথা রাখার ইচ্ছায়। ঠিক সেই সময়েই তিনি অরহত্ত্ব মার্গফল লাভ করলেন। সম্মেলন আরম্ভের কিছুক্ষণ পূর্বেই তিনি তাঁর জন্য রক্ষিত আসনে মাটি ভেদ করে উপবিষ্ট হলেন। উপস্থিত সকলেই বুঝলেন যে আনন্দ বীর্যবানের পরিচয় দিয়েছেন এবং ভিক্ষু করণীয় কাজ সম্পাদন করেছেন। যথাসময়ে অরহত মহাকশ্যপের সভাপতিত্বে বক্তব্য প্রদানের জন্য বিনয়ধর উপালী স্থবিরকে আহবান জানালেন। উপালী স্থবির ধর্মাসনে বসে বিনয় আবৃত্তি করলেন। পূর্বোক্ত নিয়মে আনন্দ স্থবির ধর্মাসনে বসলেন। অরহত মহাকশ্যপ তাঁকে সূত্র ও অভিধর্ম বিষয়ে প্রশ্ন করলেন অরহত আনন্দ স্থবির উত্তর প্রদান করেন। সেই উত্তর যথাযথ হচ্ছে কিনা উপস্থিত ভিক্ষুরা তা পর্যালোচনা করেন। এইভাবে পঞ্চশত অরহত দ্বারা প্রথম সঙ্গীতির কার্য্য সু-সম্পাদিত হয়েছিল বলে ইহা পঞ্চশতিকা সঙ্গীতি নামে অভিহিত। 

অতএব, এই শ্রাবণী পূর্ণিমা দিনটি উল্লেখ যোগ্য দুটি বিষয়ই বৌদ্ধদের ঐতিহাসিক অভিস্মরণীয় দিন। বিশেষত বুদ্ধের জীবদ্দশায় ৪৫ বৎসর ব্যাপী ধর্ম প্রচার করে যা যা তিনি ভাষণ করেছিলেন, সেই ভাষিত উপদেশ নিয়েই ত্রিপিটক শাস্ত্র। সেই ত্রিপিট শাস্ত্রই প্রথম সঙ্গায়ণে থেকে চয়ণ করা হয়েছিল।

রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২

অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠনের ৬ষ্ট বর্ষপূর্তি এবং ৭ম বর্ষে পদার্পণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন

অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠনের ৬ষ্ট বর্ষপূর্তি এবং ৭ম বর্ষে পদার্পণ অনুষ্ঠান সম্পন্ন



গত ২৫ নভেম্বর ২০২২ ইং তারিখ রোজ শুক্রবার "অগ্রগতির অর্ধযুগে অগ্রদূত"-এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠনের অগ্রগামী তরুণ সদস্যরা তাদের প্রিয় সংগঠনের ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয় ও সেবামূলক কার্যক্রমের আয়োজন করে। ।



উদযাপন পরিষদের সদস্য সচীব শ্রীমাণ সুষ্ময় বড়ুয়া-এর সঞ্চালনায় এবং পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানের সর্বপ্রথম সংগঠনের সকল সদস্য সকাল ৮ঘটিকায় নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহার, চট্টগ্রাম-এ মিলিত হয়। এরপর সকালবেলার বুদ্ধ পূজা দানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বর্ষপূর্তির নানা আয়োজন। বুদ্ধ পূজা শেষে বাসযোগে সদস্যরা সকলে চট্টগ্রামস্থ জোবরা গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা করে। নৈসর্গিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যবেষ্টিত জোবরা গ্রামের একটি অনাথ আশ্রমে অবস্থানরত সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের সাথে ছিল সারাদিন জুড়ে বর্ষপূর্তির নানা আয়োজন। জোবরা গ্রামের অন্তর্গত সুগত বিহারে বুদ্ধ পূজা ও বুদ্ধ বন্দনাসহ বিভিন্ন ধর্মীয় কার্যক্রম দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভসূচনা করা হয়। পরবর্তীতে অনাথ আশ্রমের শিশু-কিশোরদের নিয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শ্রীমাণ প্রত্যয় বড়ুয়া নিলয়। এতে উদ্বোধনী সংগীত, জাতীয় সংগীতসহ আরো অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসমূহ অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্বে শ্রীমাণ উৎস বড়ুয়ার পরিচালনায় শিক্ষার্থীদের বিনোদন এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলজ খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। প্রতিযোগিতা শেষে সকল শিশু-কিশোরদের সাথে নিয়ে সংগঠনের সদস্যদের মধ্যাহ্নভোজ সম্পন্ন হয়। 



তৃতীয় পর্বে ঠিক বিকেল ৩টায় বৈকালিক বুদ্ধ বন্দনা, পঞ্চশীল গ্রহণ, অষ্টপরিষ্কার দান, পানীয় এবং অন্যান্য দানসামগ্রী দান, সূত্রপাঠ এবং ধর্মোপদেশ শ্রবণ করেন উপস্থিত সকল শিশু-কিশোর, সংগঠনের সদস্যসহ গ্রাম থেকে আগত পূণ্যার্থী তথা দায়ক-দায়িকাগণ। 

এতে ধর্মীয় বিভিন্ন দিকনির্দেশনামূলক ধর্মোপদেশ প্রদান করেন জোবরা সুগত বিহারের উপাধ্যক্ষ ভদন্ত নিরোধানন্দ ভিক্ষু মহোদয়। এছাড়াও সংগঠনের সম্মানিত উপদেষ্টা শ্রীমাণ সুজয় বড়ুয়া সংগঠনের ইতিপূর্বের বিভিন্ন কার্যক্রমসমূহ উপস্থাপনসহ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানের শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সংগঠনের শ্রীবৃদ্ধি কামনা করে বক্তব্য প্রদান করেন। উক্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আশীর্বাদক হিসেবে অংশ নেন জোবরা সুগত বিহারের অধ্যক্ষ কর্মযোগী ভদন্ত শীলরক্ষিত মহাথের মহোদয়। শ্রদ্ধেয় ভান্তের শারীরিক অবস্থা দেখে সংগঠনের উপদেষ্টা শ্রীমাণ সুজয় বড়ুয়া এবং সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি শ্রীমাণ প্রত্যয় বড়ুয়া নিলয় অগ্রদূত বৌদ্ধ সংগঠনের সকল সদস্যদের পক্ষ হতে ভান্তের চিকিৎসার জন্য শ্রদ্ধাদান প্রদান এবং ভান্তের সুস্থজীবন প্রার্থনা করেন। ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে শ্রদ্ধেয় ভান্তের হাত দিয়ে বর্ষপূর্তির কেক কর্তন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়। এছাড়াও, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ এবং বিভিন্ন ইভেন্টে বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। শিক্ষা উপকরণসমূহ হাতে পেয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মুখ হাসি ও আনন্দে ভরে ওঠে। সর্বশেষ পর্বে, সংগঠনের সকল সদস্যগণ জোবরা গ্রাম হতে নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করেন। নন্দনকানন বৌদ্ধ বিহারে পঞ্চশীল গ্রহণসহ ফানুস উত্তোলন করা হয়।সংগঠনের একনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সদস্যা শ্রীমতী প্রজ্ঞা বড়ুয়া-এর তত্ত্বাবধানে ৬ষ্ঠ বর্ষপূর্তি-কে কেন্দ্র করে হাজার প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে জগতের সকল প্রাণির সুখ কামনা করে দিনের কার্যক্রমের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

উল্লেখ্য, বর্ষপূর্তি উদযাপনকে কেন্দ্র করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট উদযাপন পরিষদ গঠন করা হয়। আহ্বায়ক শ্রীমাণ অনিন্দ্য বড়ুয়া এর আহ্বানে সংগঠনের প্রিয়মুখ শ্রীমাণ সুস্ময় বড়ুয়া-কে প্রধান অর্থাৎ সদস্য সচীব করে উদযাপন পরিষদটি গঠিত হয়। এতে আরো ছিলেনঃ অর্থসচীব-শ্রীমাণ প্রত্যয় চৌধুরী রিদ্দি, প্রধান সমন্বয়কারী-শ্রীমাণ উৎস বড়ুয়া, সমন্বয়কারী-শ্রীমতি প্রজ্ঞা বড়ুয়াসহ সংগঠনের অন্যান্য ৭জন সদস্য-সদস্যা

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সম্মিলিত প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপন  পরিষদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

সম্মিলিত প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপন পরিষদের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত

 


বৌদ্ধদের অন্যতম জাতীয় ধর্মীয় উৎসব শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা সুষ্ঠ ও সুন্দর, নিরাপদে, নিবিঘেœ প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় বৌদ্ধিক ভাবধারায় প্রতিবছরের ন্যায় উদ্যাপনের লক্ষে গত ১০ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় নগরীর জামালখানস্থ বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে সম্মিলিত প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপন পরিষদর উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভা বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি যুব’র সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার বড়ুয়ার সভাপতিত্বে বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাষ্টি মিথুন রশ্মি বড়ুয়ার সঞ্চালনায় এক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সভায় বক্তারা বলেন, আশ্বিনী পূর্ণিমার অপর নাম প্রবারণা পূর্ণিমা। প্রবারণা শব্দের অর্থ আশার তৃপ্তি, অবিলাস পূরণ, শিক্ষা সমাপ্তি অথবা ধ্যান শিক্ষা সমাপ্তি বুঝায়। প্রবারণার এ পূর্ণ তিথিতে বিশ্বের সমগ্র বৌদ্ধ জাতির আনন্দ উৎসবের দিন বলা যায়। এই পবিত্র দিবসে বৌদ্ধরা আকাশে ফানুস উড়ায়। ঝাঁকঝমক পূর্ণভাবে প্রবারণা পূর্ণিমা পালনের জন্য বিভিন্ন সাংগঠনিক দিক নিয়ে আলোক পাত করেন। কোতোয়ালী থানা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক টিংকু বড়ুয়া, রাউজান উপজেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক ত্রিদীপ কুমার বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘ যুব’র সভাপতি পুষ্পেন বড়ুয়া কাজল, সাংস্কৃতিক সংগঠক প্রণব রাজ বড়ুয়া, মহানগর যুবলীগ নেতা স্বরূপ বিকাশ বড়ুয়া বিতান, সনত বড়ুয়া, কাজল প্রিয় বড়ুয়া, বাংলাদেশ বৌদ্ধ যুব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সজিব বড়ুয়া ডায়মন্ড, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রোমেল বড়ুয়া রাহুল, সংগঠক এপেক্সিয়ান মৃণাল কান্তি বড়ুয়া, সংগঠক তমাল বড়ুয়া, কনিক বড়ুয়া, অমল কান্তি বড়ুয়া, শুভ বড়ুয়া প্রমুখ। বিভিন্ন বৌদ্ধ যুব ও ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ত্রিরত্ন সংঘ, সম্যক, পলিটেকনিক বৌদ্ধ ছাত্র পরিষদ, নন্দন, মহাকারুনিক, মারমা যুব সমাজ, মঙ্গল সংঘ, আর্য সংঘ সহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির স্বাস্থ্য বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়াকে আহ্বায়ক বৌদ্ধ ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ট্রাষ্টি মিথুন রশ্মি বড়ুয়াকে প্রধান সমন্বয়কারী, বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি যুব’র সাধারণ সম্পাদক স্বপন কুমার বড়ুয়াকে সদস্য সচিব করে ১২১ সদস্য বিশিষ্ট সম্মিলিত প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপন পরিষদ ২০২২ গঠন করা হয়। সভায় চট্টগ্রামসহ বৌদ্ধ বিহার সমূহের সার্বিক নিরাপত্তা বিধান করার লক্ষ্যে প্রজাতন্ত্রের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ ও স্মারকলিপি প্রদান এবং আগামী ৯ অক্টোবর প্রবারণা পূর্ণিমায় নন্দনকানন বৌদ্ধ মন্দির চত্বর সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকায় ঝাঁক-জমক পূর্ণভাবে ফানুস উত্তোলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যা ৬ টায় জামালখানস্থ বুড্ডিস্ট ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে পরবর্তী সভা আহ্বান করা হয়।

নিউজঃফেইসবুক থেকে সংগ্রহকৃত

শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

দান, সেবা ও মানবতার শিক্ষা - মধু পূর্ণিমা

দান, সেবা ও মানবতার শিক্ষা - মধু পূর্ণিমা



আজ শুভ মধু পূর্ণিমা। বৌদ্ধ বিশ্বের ইতিহাসে এটি অন্যতম এক শুভ তিথি। বিশেষ করে বর্ষাবাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমাতে এটি উদযাপিত হয়। বর্ষাবাসের দ্বিতীয় পূর্ণিমা তিথি ভাদ্র মাসে এই উৎসব উদযাপন করা হয়। তাই এর অপর নাম ভাদ্র পূর্ণিমা।

তবে বিশ্বে এটি ‘মধু পূর্ণিমা’ নামে পরিচিত। বুদ্ধ জীবনের নানা ঘটনা এবং দান, ত্যাগ ও সেবার নানা মহিমায় দিবসটি ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক দিক থেকে বেশ গুরুত্ব বহন করে।

মধু পূর্ণিমার শুভ এ দিনটি বৌদ্ধরা নানা উৎসব, আনন্দ ও আয়োজনের মধ্য দিয়ে উদযাপন করেন। নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষ এদিন বুদ্ধ ও ভিক্ষুসংঘকে মধুদান করার জন্য উৎসবে মেতে ওঠেন। বিহারে দেখা যায় সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মধুদানের এক আনন্দঘন পরিবেশ। বিহারে সন্ধ্যায় বৌদ্ধকীর্তন ও পুঁথিপাঠ করা হয় এবং বিশ্ব শান্তি কামনায় সমবেত প্রার্থনা ও প্রদীপ প্রজ্বালন করা হয়।

আমরা জানি, মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ বুদ্ধত্ব লাভের পর মোট ৪৫ বছর বর্ষাবাসব্রত পালন করেন অরণ্য, পর্বত, গুহা, বিহার ইত্যাদি নানা স্থানে। তার মধ্যে দশম বর্ষাবাস যাপন করেন পারিলেয়্য নামক বনে। বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিবাদ ও বিনয় সম্পর্কিত নানা অসন্তোষ আচার-আচরণের কারণে তিনি সেই পারিলেয়্য বনে গিয়েছিলেন। কোসাম্ভীর ঘোষিতারামে দু’জন পণ্ডিত ভিক্ষুর মধ্যে ক্ষুদ্র একটি বিনয় বিধান নিয়ে মতবিরোধের সৃষ্টি হয়। তারা উভয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে সংঘভেদ করেন। স্বয়ং ভগবান বুদ্ধ তাদের এ মতবিরোধ মেটানোর জন্য শ্রাবস্তী থেকে সেখানে আসেন এবং বিরোধ মিটিয়ে দিয়ে পুন শ্রাবস্তীতে প্রত্যাবর্তন করেন। বুদ্ধ চলে যাওয়ার পর তাদের মধ্যে আবার বিরোধ সৃষ্টি হয় এবং একে অপরকে দোষারোপ করেন।

এতে তাদের অনুসারী ভিক্ষুসংঘের মধ্যেও বিরোধ দেখা দেয়। বুদ্ধ দেখলেন, তারা নিজেরা নিজেদের আত্মকলহে জড়িয়ে তাদের অনুসারীদের মধ্যে একটি বিভাজন তৈরি করে দেন, যা সংঘ ও সদ্ধর্ম-শাসনের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। বৌদ্ধ পরিভাষায় একেই বলে ‘সংঘভেদ’। তখন বুদ্ধ একাকী বসবাসের পরিকল্পনা করে বালুকারাম বিহারে চলে যান এবং তার শিষ্য ভৃগু স্থবির ও শিষ্যম্ললীকে নিয়ে চারিকাব্রত করেন

। পরে প্রাচীন বংশরক্ষক মৃগদায়ের দুই কুলপুত্রকে মৈত্রী ও মিলন সম্পর্কে উপদেশ দিয়ে পারিলেয়্য বনে চলে যান এবং সেই বনের একটি ভদ্রশাল রক্ষিত বৃক্ষমূলের বনসন্ডে বর্ষাব্রত অধিষ্ঠান গ্রহণ করেন। সেখানেই তিনি তিন মাস যাপন করেন, ধ্যান-সমাধি করেন। সে বনে ছিল নানা পশুপাখি ও জীবজন্তুর আবাস। বুদ্ধের অপরিমেয় মৈত্রী ও করুণার প্রভাবে বনের সেসব পশুপাখি ও জীবজন্তু তাদের হিংস্রতা পরিহার করে।

ভাদ্র মাসের এ পূর্ণিমার সঙ্গে বুদ্ধজীবনে বানরের মধুদানের এক বিরল ঘটনা জড়িয়ে আছে। সেদিনের বানরের মধুদান বৌদ্ধ ইতিহাস ও সাহিত্যে একটি নিছক ঘটনা মনে হলেও এ থেকে আমরা সেবা, ত্যাগ ও দানচিত্তের এক মহৎ শিক্ষা পেয়ে থাকি।

বনের একটি বানর হয়ে বুদ্ধকে দান দিয়ে যেখানে তার মহৎ উদারতা ও ত্যাগের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছে, তৃপ্তি পেয়েছে এবং আনন্দে উদ্বেলিত হয়েছে, সেখানে আমরা মানুষ হয়েও আজ বিপন্ন মানুষের প্রতি সেই উদারতা, ত্যাগ ও দানের মহিমা দেখাতে পারছি না।

আজ বিবেকের কাছে আমাদের প্রশ্ন- মানবতা, সেবা আর ত্যাগে আমাদের চিত্তকে কি আমরা সেভাবে প্রসারিত করতে পারি না? মধু পূর্ণিমা আমাদের সবার জীবনে শান্তি ও কল্যাণ বয়ে আনুক। আমাদের হৃদয় ভরে উঠুক অপার মৈত্রী-করুণায় এবং দান, দয়া, সেবা আর অকৃত্রিম ভালোবাসায়। সব্বে সত্তা সুখীতা ভবন্তু- জগতের সকল জীব সুখী হোক। ভবতু সব্ব মঙ্গলং- সকলের মঙ্গল লাভ হোক। বাংলাদেশ সমৃদ্ধ হোক। বিশ্বে শান্তি বর্ষিত হোক।

প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া : সাবেক চেয়ারম্যান, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি, বিশ্ব বৌদ্ধ ফেডারেশন বাংলাদেশ চ্যাপ্টার