jatok লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
jatok লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২১

আজ শুভ মাঘী পূর্ণিমা

আজ শুভ মাঘী পূর্ণিমা

 



আজ শুভ মাঘী পূর্ণিমা। এটি বৌদ্ধদের জন্য অত্যন্ত শোকাবহ একটি ঘটনা। এই পূর্ণিমা তিথিতেই মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ তার মহাপরিনির্বাণের দিন ঘোষণা করেন। আজ সারা বিশ্বের বৌদ্ধরা এই মহান তিথিটি নানা অনিত্য সভা এবং পূজা-অর্চনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে।

ভগবান বুদ্ধ পঁয়তাল্লিশ বর্ষাবাস অর্থাৎ অন্তিম বর্ষা রাজগৃহের বেনুবনে অধিষ্ঠান করেন। সে সময় তিনি ভীষণ রোগে আক্রান্ত হন। পরে প্রবল ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর ধ্যানবলে রোগমুক্ত হন। ভগবান বুদ্ধ বেনুবনে বর্ষাব্রত শেষ করে দেশ পরিভ্রমণের ইচ্ছা পোষণ করেন। পরে তিনি ক্রমে বৈশালীর চাপালচৈত্যে উপস্থিত হন। তখন তার বয়স পূর্ণ হয় আশি বছরে। এ সময় তিনি চাপালচৈত্যে ধ্যানস্থ হয়ে ভাবলেন তার পরিনির্বাণের সময় সন্নিকটে। পরে তিনি ভাবলেন এখনও তার শিষ্য-প্রশিষ্য, ভিক্ষু-ভিক্ষুণী এবং উপাসক-উপাসিকাগণ সুন্দর জীবনযাপনের যোগ্যতা অর্জন করেনি। এ অবস্থায় তিনি কি পরিনির্বাণ লাভ করতে পারেন? তখন তিনি সেবক আনন্দকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে আনন্দ, এই বৈশালী অত্যন্ত মনোরম স্থান। এখানকার উদ্যান, চৈত্য, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।’ ভগবান ইচ্ছা করলে ঋদ্ধিবলে কল্পকাল অবস্থান করতে পারেন। কিন্তু কাল সর্বগ্রাসী। জীবন অনিত্য, সংস্কার অনিত্য। জন্ম হলেই মৃত্যু অনিবার্য। এই বিশ্বে যে যতই শক্তি ও ক্ষমতাশালী হোক না কেন এবং যে যতই বিত্ত-বৈভব ও সম্পদ-ঐশ্বর্যের অধিকারী হোক না কেন, কেউ মৃত্যু থেকে মুক্ত হন। ধ্যানী-জ্ঞানী, মুনি-ঋষী- মৃত্যু সবাইকে স্পর্শ করে। সবাই মৃত্যুর অধীন। এই মহান সত্যটি বুদ্ধজীবনেও অনিবার্য।


ভগবান বুদ্ধ আনন্দকে আবার সম্বোধন করে বললেন, ‘হে আনন্দ, অচিরেই তথাগত পরিনির্বাণ প্রাপ্ত হবেন। এখন থেকে তিন মাস পর বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতেই আমি পরিনির্বাপিত হবো।’ সুতরাং আজ মাঘী পূর্ণিমায় ভগবান বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের দিন ঘোষণাই ছিল মুখ্য বিষয়। বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণের ঘোষণা শুনে তার শিষ্য-প্রশিষ্যগণ সবাই ব্যথিত হন, রোদন করেন। তখন বুদ্ধ তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘অনিচ্চা বত সঙখারা, উপ্পাদা বয ধম্মিনো, উপ্পাজিত্বা- নিরুজ্জন্তি ততো উপ সম সুখো।’ অর্থাৎ উৎপত্তি ও বিলয় জগতের নিয়ম। উৎপত্তি হয়ে নিরুদ্ধ হওয়া জাগতিক ধর্ম। এই মহাসত্যটি জীবন ও জগতের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। অতএব এই মহান সত্যবাণী ও দর্শনটি আমাদের সবারই অনুধাবন করা উচিত।

এই তিথিতে মহাকারুণিক ভগবান বুদ্ধ তার শিষ্যদের উদ্দেশে অন্তিম ভাষণ প্রদান করেন। বুদ্ধ শিষ্যদের বলেছিলেন, হে ভিক্ষুগণ! তোমরা অপ্রমাদের সঙ্গে ধর্মপালন করিও। আমি তোমাদের উদ্দেশে এবং জগতের সব প্রাণীর হিত ও কল্যাণের জন্য যে ধর্ম ভাষণ করেছি, তা উত্তমরূপে আচরণ করিও। যে ধর্ম আদিতে কল্যাণ, মধ্যে কল্যাণ এবং অন্তেও কল্যাণকর সেই ধর্ম প্রচার করিও এবং বিশুদ্ধ ব্রহ্মচর্য পালন করিও। ‘বয ধম্মা সঙ্খারা অপ্পমাদেন সম্পাদেথ’- অর্থাৎ জগতের সংস্কারসমূহ ক্ষয়শীল, ধ্বংসশীল। অতএব তোমরা অপ্রমাদের সঙ্গে নির্বাণ সাধনা করিও।


প্রফেসর ড. সুকোমল বড়ুয়া : সাবেক চেয়ারম্যান, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সভাপতি, বিশ্ব বৌদ্ধ ফেডারেশন- বাংলাদেশ চ্যাপ্টার


মঙ্গলবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০২১

বুদ্ধের ভিক্ষুসংঘকে মঙ্গলবিষয়ক সাতটি উপদেশ

বুদ্ধের ভিক্ষুসংঘকে মঙ্গলবিষয়ক সাতটি উপদেশ

 


হে ভিক্ষুগণ, আমি তোমাদের সাতটি মঙ্গলবিধায়ক ধর্মের উপদেশ দেবো, শোনো, উত্তমভাবে মনঃসংযোগ করো।’

১ ৷ হে ভিক্ষুগণ, যতদিন ভিক্ষুগণ নিজেদের সম্মিলনের ব্যবস্থা করে বার বার একত্রিত হবেন ততদিন তাঁদের পতন না হয়ে উত্থান হইবে ৷
২৷ যতদিন তাঁরা সমগ্র হয়ে একত্রিত হবেন ৷ সমগ্র হয়ে উত্থান করবেন ততদিন তাঁদের পতন না হয়ে উত্থান হইবে ৷

৩৷ যতদিন সমগ্র হয়ে সংঘনির্দিষ্ট কর্মসমূহের সম্পাদন করবেন ততদিন তাঁদের পতন না হয়ে উত্থান হইবে ৷

৪ ৷ যতদিন তাঁরা অব্যবস্থিতের ঘোষণা না করবেন, ব্যবস্থিতের উচ্ছেদ না করবেন, যথাব্যবস্থিত শিক্ষাপদগুলোর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবেন ততদিন তাঁদের পতন না হয়ে উত্থান হইবে ৷

৫ ৷যতদিন তাঁরা তাঁদের মাঝে যাঁরা অভিজ্ঞ, বহুপূর্বগ, সংঘপিতা, সংঘপরিনায়ক, তাঁদের সৎকার করবেন, তাঁদের ভক্তি করবেন, তাঁদের সম্মান ও পূজা করবেন, তাঁদের বাক্য উপদেশ মেনে চলা উচিত বলে মনে করবেন ততদিন তাঁদের পতন না হয়ে উত্থান হইবে ৷


৬ ৷ যতদিন তাঁরা উৎপন্ন পুনর্জন্মদায়ক তৃষ্ণার বশবর্তী না হয়ে তাঁরা নির্জনবাসে প্রীতিলাভ করবেন ততদিন তাঁদের পতন না হয়ে উত্থান হইবে ৷

৭ ৷ যতদিন তাঁরা নিজ নিজ চিত্তের সৈ'র্য সম্পাদন করবেন, যাতে অনাগত প্রিয়শীল সব্রহ্মচারীগণ তাঁদের কাছে আসতে পারেন এবং যাঁরা আগত তাঁরা স্বচ্ছন্দে অবস্থান করতে পারেন ততদিন তাঁদের পতন না হয়ে উত্থান হইবে ৷

যতদিন এই সাত মঙ্গলবিধায়ক ধর্ম তাঁদের মাঝে বর্তমান থাকবে, যতদিন তাঁরা ওই ধর্মানুসারে নিজেদের নিয়ন্ত্রিত করবেন, ততদিন তাঁদের পতন না হয়ে উত্থান হইবে ৷

[©ফেইসবুক থেকে নেওয়া]

শুক্রবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২১

গৌতম বুদ্ধের আলোচিত উক্তিসমূহ

গৌতম বুদ্ধের আলোচিত উক্তিসমূহ




১। অতীতকে প্রাধান্য দিও না, ভবিষ্যত নিয়ে দিবাস্বপ্নও দেখবে না। তার চেয়ে বরং বর্তমান মুহূর্ত নিয়ে ভাবো।

 ২। সবকিছুর জন্য মনই আসল। সবার আগে মনকে উপযুক্ত করো, চিন্তাশীল হও। আগে ভাবো তুমি কী হতে চাও।

 ৩। আনন্দ হলো বিশুদ্ধ মনের সহচর। বিশুদ্ধ চিন্তাগুলো খুঁজে খুঁজে আলাদা করতে হবে। তাহলে সুখের দিশা তুমি পাবেই।

 ৪। তুমিই কেবল তোমার রক্ষাকর্তা, অন্য কেউ নয়। 

 ৫। জীবনের প্রথমেই ভুল হওয়া মানেই এই নয় এটিই সবচেয়ে বড় ভুল। এর থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যাও।

 ৬। অনিয়ন্ত্রিত মন মানুষকে বিভ্রান্তিতে ফেলে। মনকে প্রশিক্ষিত করতে পারলে চিন্তাগুলোও তোমার দাসত্ব মেনে নেবে। 

 ৭। তোমাদের সবাইকে সদয়, জ্ঞানী ও সঠিক মনের অধিকারী হতে হবে। যতই বিশুদ্ধ জীবনযাপন করবে, ততাই উপভোগ করতে পারবে জীবনকে।

 ৮। আমরা অনেকেই একটা কিছুর সন্ধানে পুরো জীবন কাটিয়ে দেই। কিন্তু তুমি যা চাও তা হয়তো এরইমধ্যে পেয়েছ। সুতরাং, এবার থামো। 

 ৯। সুখের জন্ম হয় মনের গভীরে। এটি কখনও  বাইরের কোনো উৎস থেকে আসে না। 

 ১০। অন্যের জন্য ভালো কিছু করতে পারাটাও তোমার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। 

 ১১। জীবনের খুব কম মানুষের জীবনে পরিপক্কতা আসে। সঙ্গী হিসেবে এই পরিপক্কতাকে তোমার অর্জন করতে হবে। তবে তা ভুল মানুষকে অনুসরণ করে নয়। এই পরিপক্কতা অর্জনে বরং একলা চলো নীতি অনুসরণ করো। 

 ১২। করুণাই বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তি। 

 ১৩। সুখ কখনও আবিষ্কার করা যায় না। এটি সবসময় তোমার কাছে আছে এবং থাকবে। তোমাকে কেবল দেখার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। 

 ১৪। রেগে যাওয়া মানে নিজেকেই শাস্তি দেওয়া।  

 ১৫। সত্যিকারভাবে ক্ষমতা নিয়ে বাঁচতে হলে নির্ভয়ে বাঁচো।


১৬। জীবনে ব্যাথা থাকবেই, কিন্তু কষ্টকেই ভালোবাসতে শেখো।

 ১৭। অনেক মোমবাতি জ্বালাতে আমরা কেবল একটি মোমবাতিই ব্যবহার করি। এর জন্য ওই মোমবাতিটির আলো মোটেও কমে না। সুখের বিষয়টিও এমনই।  

 ১৮। যখন আমরা মনের রূপান্তর ঘটাই, আর চিন্তাগুলো বিশুদ্ধ করি, তখন আমরা অন্যায় কাজ থেকে জীবনকে পরিশুদ্ধ করি। এর মাধ্যমে খারাপ কাজের চিহ্নও মুঁছে যায়। 

১৯। অন্যকে কখনও নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করো না, নিয়ন্ত্রণ করো কেবল নিজেকে। 

 ২০। আলোকিত হতে চাইলে প্রথমে নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করো। 

 ২১। জ্ঞানগর্ভ জীবনের জন্য মুহূর্তের ইতিবাচক  ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এই জন্য ভয়কে তুচ্ছ করতে হবে, এমনকি মৃত্যুকেও। 

 ২২। এই তিনটি সর্বদা দেখা দেবেই: চাঁদ, সূর্য এবং সত্য।

 ২৩। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুহূর্তের সমন্বয়ই জীবন। কেবল একটি সঠিক মুহূর্ত পাল্টে দেয় একটি দিন। একটি সঠিক দিন পাল্টে দেয় একটি জীবন। আর একটি জীবন পাল্টে দেয় গোটা বিশ্ব। 

২৪। নিজের কথার মূল্য দিতে হবে নিজেকেই। কেননা, তোমার নিজের কথার ওপর নির্ভর করবে অন্যের ভালো কাজ কিংবা মন্দ কাজ। 

 ২৫। ঘৃণায় কখনও ঘৃণা দূর হয় না। অন্ধকারে আলো আনতে তোমাকে কোনো কিছুতে আগুন জ্বালতেই  হবে। 

 ২৬। শুভর সূচনা করতে প্রত্যেক নতুন সকালই তোমার জন্য এক একটি সুযোগ।

 ২৭। আমরা প্রত্যেকেই একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। একজন আরেকজনের পরিপূরক। অর্থাৎ সমাজে আমরা কেউ একা নই। 

 ২৮। খারাপটি সর্বদা তুমি নিজেই পছন্দ করছো। সুতরাং, তোমার খারাপ কাজের জন্য তুমি নিজেই দায়ী। এর দায়ভার অন্য কারো নয়।। 

২৯। তোমার চিন্তাই তোমার শক্তির উৎস। নেতিবাচক চিন্তা তোমাকে অনেক বেশি আঘাত করে যা তোমার ধারণায় নেই। 

৩০। নির্বোধ বন্ধু আদৌ কোনো বন্ধু নয়। নির্বোধ বন্ধু থাকার চেয়ে একা হওয়া অনেক ভালো।