
জন্ম ও শৈশব কাল : - রাউজান উপজেলার বৌদ্ধ অধ্যুষিত গ্রাম বিনাজুরীতে সুনীল বড়ুয়ার ওরশজাত মায়া বড়ুয়ার কোল জুড়ে শুভ ক্ষনে শুভলগ্নে ধরাধামে আসে ২য় পুত্র সন্তান। সেদিন ছিল ১ জুন ১৯৮৪ সাল শুক্রবার। চারিদিকে খুশীর জোয়ার, বাড়ির বয়স্ক মাতৃমন্ডলী উলু ধ্বনী দিয়ে জয় জয় রব শোনালো সমস্বরে। বাবা-মা আদর করে জয় বলে ডাকতে শুরু করল। শুভদিন ঠিক করে পাড়া প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন উৎসব করে নাম রাখল সবুজ বড়ুয়া।
১৯৯১ সালে সুনীল বড়ুয়া জীবন জীবিকার তাগিদে পরিবার পরিজন নিয়ে আদি নিবাস বিনাজুরী ছেড়ে একেবারে চলে আসেন রাঙ্গুনিয়া শুকবিলাস গ্রামে। শুকবিলাসে তিনি বসতবাড়ি গড়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করেন। সুনীল বড়ুয়ার দুই পুত্র সন্তানের মধ্যে সবুজ বড়ুয়া ছোট। তিনি দুইজনকে শুকবিলাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখানে জয় তথা সবুজ বড়ুয়া ১ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। ১৯৯২ সালে চলে যায় বেতাগী অনাথ আশ্রমে। আশ্রমে থাকাকালীন সময়ে ভর্তি হন বেতাগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে । এই বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণির পাঠ চুকিয়ে আশ্রম ছেড়ে চলে যায় পূর্ব আধাঁরমানিক শ্রদ্ধানন্দ বিহারে, ভর্তি হন আধাঁরমানিক নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে।
প্রবজ্যা : - সবুজ বড়ুয়া জয় এতোদিন পর্যন্ত অনুধাবন করল যে, সংসার দুঃখময় বর্জ্যে পরিপূর্ন। তাই বিবিধ সাংসারিক উপদ্রববিহীন অনাগরিক জীবন লাভের ব্রতী হয়ে বুদ্ধ শাসনে অনুপ্রবেশের জন্য দুঃখকে জয় করার প্রত্যয়ে ১৯৯৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শুভদিনে ১২ বছর বয়সে প্রবজ্যিত হয়ে সুমনশ্রী শ্রমন নাম রাখা হল।
উপসম্পদা : - সুমনশ্রী শ্রামণ বুদ্ধের দর্শনকে পরিপূর্ণভাবে জানার মানসে শীল সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলনের জন্য ২৭ অক্টোবর ২০০৫ সালে এক মহালগ্নে উপসম্পদা লাভ করেন।
প্রাতিষ্টানিক শিক্ষালাভ : - শ্রমণ অবস্থায় আধাঁরমানিক নতুন বাজার উচ্চ বিদ্যালয় হতে এস এস সি এবং কুয়াইশ ডিগ্রী কলেজ থেকে ২০০৬ সালে মানবিক বিভাগ হতে এইচ এস সি কৃতিত্বের সহিত পাশ করেন।
বিদেশ ভ্রমণ :- বুদ্ধের ধর্ম ও বিনয় শিক্ষার জন্য ১১ বার ভারত, ২ বার শ্রীলংকা, ১ বার নেপাল, ২ বার বার্মা এবং ১ বার থাইল্যান্ড প্রভৃতি প্রতিরূপ দেশ ভ্রমণ করেন। বিমুক্তির পথ অন্বেষণে প্রথমবার শ্রীলংকা গুন আর্দানা বিদর্শন ভাবনা সেন্টারে দ্বিতীয়বার বার্মা আন্তর্জাতিক অর্হৎ মাহাসি নিগাহ্ সতিপট্ঠান ভাবনা কেন্দ্রে ধ্যান অনুশীলন করেন।
ধুতাঙ্গ অধিষ্ঠান : - বার্মা ধ্যান সেন্টারে ২০০৫ সালের জুলাই মাসে ত্রিচীবরিক, পিন্ডপাতিক, একাসনিক, কলুপৎসাত ও শয়নাসন ইত্যাদি বিষয়ে অধিষ্ঠান রত ছিলেন এবং ওখানে কিছুদিন অবস্থান করেন।
শশ্মানিক অধিষ্ঠান : - দীর্ঘদিন বার্মা ধ্যান সমাধি অনুশীলন করে চরণদ্বীপ জ্ঞানাঙ্কুর বিহারে ফিরে আসেন। চরণদ্বীপ জ্ঞানাঙ্কুর বিহারে অবস্থানকালিন সময়ে ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর আশ্বিনী পূর্ণিমা তিথিতে রাত ১২ টা হইতে কাকডাকা ভোর পর্যন্ত নিরবে নিভৃতে চরণদ্বীপ একটি পারিবারিক শশ্মান ভূমিতে অধিষ্ঠান শুরু করেন। একদিন চরণদ্বীপ গ্রামবাসীর কাছে ভান্তের অধিষ্ঠান প্রকাশ পায়। এরপর থেকে পরিপূর্নভাবে ৬ মাস এই শশ্মানে অবস্থান করেন।
বৌদ্ধ শশ্মান পরিভ্রমণ : - চরণদ্বীপ শশ্মান ভূমি হতে বের হয়ে ২০১৬ সালের ৬ মে বিভিন্ন গ্রামের শশ্মানে বুদ্ধ নির্দেশিত ” বহু জনের হিতের জন্য বহু জনের সুখের জন্য চারিদিক বিচরণ করো ” - এই ব্রত নিয়ে ২০টির অধিক গ্রামে পিন্ডচারণ ও ধর্মদেশনা শুরু করেন। যেমন বোয়ালখালী উপজেলার গোমদন্ডী, চান্দগাঁও, কধুরখীল, শাকপুরা লালার পাড়া, বৈদ্যপাড়া, করলডেঙ্গা, শ্রীপুর, খরণদ্বীপ, জ্যৈষ্ঠপুরা, পটিয়া উপজেলার পাঁচরিয়া, চরকানাই, লাখেরা, পিঙ্গলা, ভান্ডারগাঁও, কর্তালা, তেকোটা, রাউজান উপজেলার পাঁচখাইন, বাগোয়ান, পাহাড়তলী, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বেতাগী ধারাবাহিকভাবে অবস্থান করেন।
আরণ্যিক অধিষ্ঠান : - বোয়ালখালী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও পটিয়া উপজেলার ২০টির অধিক বৌদ্ধ শশ্মানে অধিষ্ঠান করে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই হতে শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরার গহীন অরণ্যে অদ্যাবধি অধিষ্ঠান রত আছেন। শীল সমাধি ও প্রজ্ঞার অনুশীলন করে সর্বোপরি নির্বাণ সাধনায় রত থেকে আজীবন অরণ্যে অবস্থান করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহন করেন।