শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০২৫

১২৭ বছর পর ভারতে ফিরে এলো বুদ্ধের মূল্যবান রত্ন

 


:ভারতের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক নতুন অধ্যায় রচিত হলো। দীর্ঘ ১২৭ বছর পর বুদ্ধের পবিত্র গহনাগুলো  ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ১৮৯৮ সালে বর্তমান উত্তর প্রদেশের পিপরাহওয়া থেকে আবিষ্কৃত এই অমূল্য নিদর্শনগুলো কূটনীতি, সংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের এক অসাধারণ সমন্বয়ের মাধ্যমে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

ব্রিটিশ প্রকৌশলী উইলিয়াম ক্ল্যাক্সটন পেপে ১৮৯৮ সালে পিপরাহওয়া স্তূপের কাছে এই গহনাগুলো আবিষ্কার করেন। এগুলোর মধ্যে ছিল বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত রিলিকুয়ারি, স্ফটিকের বাক্স, অলঙ্কার এবং পোড়া মানব দেহাবশেষ। একটি লিপির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় যে এগুলি সাক্য গোত্রের ছিল, যা গৌতম বুদ্ধের আত্মীয়দের গোত্র। দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন সংগ্রহে থাকার পর সম্প্রতি গহনাগুলির একটি অংশ হংকংয়ের সোথেবি'স নিলামে ওঠে আসে, যা ভারতের জন্য এক বিরাট আঘাত ছিল।

সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপ

নিলামের খবর জানার পর ভারত সরকার এই নিলাম ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়। বিদেশ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং লন্ডন ও হংকংয়ে অবস্থিত ভারতীয় মিশনগুলো কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে। একই সঙ্গে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ কনফেডারেশন (IBC) বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধ নেটওয়ার্কগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে নৈতিক চাপ তৈরি করে।

IBC-এর মহাপরিচালক অভিজিৎ হালদার এই ঘটনাকে শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক পুনরুদ্ধার নয়, বরং "একটি জীবন্ত ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র স্মৃতির পুনরুদ্ধার" হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত দেখিয়েছে যে ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে কীভাবে কার্যকর কূটনীতি পরিচালিত হতে পারে।

গৌরবময় প্রত্যাবর্তন

গত ৩০শে জুলাই, ২০২৫ তারিখে নয়াদিল্লিতে এক জমকালো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গহনাগুলোর প্রত্যাবর্তন উদযাপন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে বৌদ্ধ সন্ন্যাসী, কূটনীতিক এবং উচ্চপদস্থ সাংস্কৃতিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। গহনাগুলো বর্তমানে জাতীয় জাদুঘরে রাখা হয়েছে, যেখানে এগুলি জনসাধারণের জন্য প্রদর্শন করা হবে। ভবিষ্যতে সারণাথ, কুশীনগর অথবা লুম্বিনি-কপিলাবস্তু করিডরের মতো গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ স্থানগুলিতে এগুলির স্থায়ী স্থান হতে পারে।


ঐতিহাসিক তাৎপর্য

গৌতম বুদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. অরবিন্দ কুমার সিংহ এই ঘটনাকে "ভারতের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক" হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, এটি কেবল গহনাগুলোর প্রত্যাবর্তন নয়, এটি "ভারতের আত্মার প্রত্যাবর্তন।"

এই ঐতিহাসিক পুনরুদ্ধার ভারতের ইতিহাসের এক সোনালি অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হবে, যা বিশ্বের কাছে ভারতের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতি সংরক্ষণে তার প্রতিশ্রুতির বার্তা দেবে। এই মুহূর্তটি শুধু ভারতের জন্যই নয়, বিশ্বজুড়ে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের কাছেও এক অমূল্য প্রাপ্তি, যা তাদের বিশ্বাস এবং ইতিহাসের প্রতি এক গভীর শ্রদ্ধার প্রতিফলন।


শেয়ার করুন

Administrator: হিমেল বড়ুয়া

যদি(কিছু_জানো){ জানাে(); }নয়তো{ জানো();